পরকীয়ার জেরে আপন ছেলেকে হত্যা; ৮ বছর পালিয়ে থেকেও শেষরক্ষা হল না ঘাতক মা খুকি বেগমের

Date: 2023-11-20
news-banner

বার্তা বিচিত্রা সর্বশেষ সংবাদ পেতে Google news অনুসরণের জন্য ক্লিক করুন


আব্দুল্লাহ আল মামুন (প্রধান প্রতিবেদক):

 

কথায় আছে, “পাপ ছাড়েনা বাপকেও” অর্থাৎ অপরাধী যতই শক্তিশালী অথবা চতুর হোক না কেন, পাপ করে কখনো পার পাওয়া যায় না। অপকর্ম করে সদর্পে ঘুরে বেড়ান বা সকলের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়ান, ধরা অপনাকে পড়তে হবে। একদিন না একদিন কৃতকর্মের মুখোমুখি হতেই হবে। এমনই এক অনন্য নজির আজকের ঘটনার খুকি বেগম।

 

পরকীয়ার জেরে নিজের ছেলেকে হত্যা করে দীর্ঘ ৮ বছর বিভিন্ন জায়গায় পালিয়ে বেড়িয়েও নিজেকে রক্ষা করতে পারলো না চাঁদপুর জেলার হাইমচর উপজেলার দক্ষিণ আলগী গ্রামের আনোয়ার উল্ল্যাহর মেয়ে সুচতুর খুকি বেগম (৫০)। গত ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ১১ টায় র‌্যাব-১০ ও র‌্যাব-১১ এর যৌথ আভিযানিক দল গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ফরিদপুর জেলার বৈঠাখালী এলাকা থেকে চাঞ্চল্যকর পরকীয়ার জেরে আপন ছেলেকে হত্যা মামলায় বিজ্ঞ আদালত কর্তৃক মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত দীর্ঘদিন পলাতক থাকা আসামী মা খুকি বেগমকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র‌্যাবের উপ-পরিচালক আমিনুল ইসলাম। এর আগে ২০১৫ সালে খুকি বেগম তার পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ছেলে আরিফকে হত্যা করলে ওই দিনই ১৯ নভেম্বর মৃত. আরিফের স্ত্রী আসমা বেগম তার শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞানামা ২/৩ জন ব্যক্তিদের আসামী করে হাইমচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-০৫, তারিখ-১৯/১১/২০১৫ খ্রি., ধারা-৩০২/২০১/৩৪ দন্ডবিধি।

 

র‌্যাব ও মামলা সূত্রে জানা যায় যে, আসামী খুকি বেগমের সাথে পার্শ্ববর্তী এলাকার জয়নাল গাজী নামক এক ব্যক্তির পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে উঠে। বিষয়টি খুকি বেগমের ছেলে আরিফ হোসেন জানতে পারে এবং এ নিয়ে মা ও ছেলের মধ্যে মনোমালিন্য শুরু হয়। ২০১৫ সালের শুরুতে ছেলে আরিফ হোসেন পার্শ্ববর্তী এলাকার আব্দুস সালাম মিজির মেয়ে আসমা আক্তারকে (১৯) বিয়ে করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। তাদের বিয়ে মা খুকি বেগম প্রথমে মেনে না নিলেও এক পর্যায়ে মেনে নেয়। তার কিছুদিন পর থেকে আরিফ হোসনে ও তার বউয়ের সাথে মা খুকি বেগমের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ঝগড়াবিবাদ শুরু হয়। এরই মধ্যে খুকি বেগম ছেলেকে হত্যার পরিকল্পনা করে। ছেলে হত্যা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৫ সালের ১৬ নভেম্বর খুকি বেগম তার ছেলের বউ আসমা বেগমকে বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।

 

এর দুইদিন পর ১৮ নভেম্বর রাতে খুকি বেগম পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী তার নিজ গৃহে ছেলে আরিফকে গরুর দুধের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দেয়। আরিফ দুধ খেয়ে অচেতন হয়ে পড়লে আরিফের মা খুকি বেগম ও তার পরকীয়া প্রেমিকসহ অজ্ঞাতনামা আরো ১/২ জনের সহযোগীতায় ছেলে আরিফকে ঘুমন্ত অবস্থায় হকিস্টিক দিয়ে পিটিয়ে, বটি ও ব্লেড দিয়ে মারাত্মকভাবে রক্তাক্ত জখম করে। পরদিন ১৯ নভেম্বর সকালে খুকি বেগম আরিফের স্ত্রী আসমাকে ফোন করে জানায় যে, ডাকাতরা আরিফকে মেরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতর জখম করে ফেলে গেছে। আরিফের স্ত্রী আসমা তাৎক্ষণিক স্বামীর বাড়িতে চলে আসে এবং আরিফকে উদ্ধার করে প্রথমে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। পরবর্তীতে অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে ঢাকা নেওয়ার পথে মতলব ফেরিঘাট পার হওয়ার সময় আরিফ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে।

 

এ ঘটনায় ওই দিনই মৃত. আরিফের স্ত্রী আসমা বেগম শাশুড়ি খুকি বেগমসহ অজ্ঞানামা ২/৩ জন ব্যক্তিদের আসামী করে হাইমচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। এরপর থেকে আসামী খুকি বেগম আত্মগোপনে চলে যায় এবং দেশের বিভিন্ন জায়গায় নিজ নাম-পরিচয় গোপন করে বসবাস করতে থাকে। ফরিদপুরেও সে নাম-পরিচয় গোপন করে বসবাস করছিল কিন্তু এবার আর আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখে ধুলো দিতে পারে নি সে। মামলাটির ছায়া তদন্তের এক পর্যায়ে উক্ত আসামীর অবস্থান সম্পর্কে জানতে পারে র‌্যাব। অতঃপর র‌্যাব-১০ ও র‌্যাব-১১ এর যৌথ প্রচেষ্টায় ফরিদপুরের বৈঠাখালী এলাকায় চালানো অভিযানে দীর্ঘ ৮ বছর পালিয়ে থাকা ঘাতক মা খুকি বেগম র‌্যাবের জালে ধরা দিতে বাধ্য হয়।

Leave Your Comments