দুলালকান্দি দাখিল মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীর উপস্থিতি ৭০ , সুপারকে দায়ী করছেন কমিটি ও অভিভাবক

Date: 2023-10-04
news-banner

বার্তা বিচিত্রা সর্বশেষ সংবাদ পেতে Google news অনুসরণের জন্য ক্লিক করুন

এস আই খান:


নরসিংদীর বেলাব উপজেলার নারায়নপুর ইউনিয়নের দুলালকান্দি দাখিল মাদ্রাসায় ১ম শ্রেনি থেকে ১০ শ্রেনি পর্যন্ত নিয়মিত উপস্থিত শিক্ষার্থী ৬৫-৭০ জন। এর জন্য কমিটি ও অভিভাবকগণ অত্র মাদ্রাসার সুপারকে দায়ী করছেন।


অভিভাবকদের পক্ষে একাধিক ব্যক্তি বার্তা বিচিত্রাকে জানান, মাদ্রাসার সুপারের একগেয়েমী মনোভাব, মাদ্রাসায় নিয়মিত উপস্থিত না থাকা, মাদ্রাসার দায়িত্ব থেকে নিজের ব্যক্তিগত দায়িত্ব পালন করার জন্য মাদ্রাসা ত্যাগ করা, শিক্ষকদের সাথে সমন্বয়ের অভাব, কমিটির সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ, নিয়মিত পাঠদানের প্রতি অবহেলা, নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অপকর্মের কারনে এলাকাবাসী তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠাতে চায় না। নিয়মিত পাঠদান না হওয়ায় এলাকার অভিভাবকরা তাদের শিক্ষার্থীদের অত্র মাদ্রাসায় না পাঠিয়ে পাশের স্কুলে পাঠায় এবং কিছু কিছু অভিভাবক তাদের সন্তানদের অত্রমাদ্রাসায় ভর্তি করালেও নিয়মিত মাদ্রাসায় পাঠাতে অনিহা প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে এক অভিভাবক বলেন, ক্লাসে শিক্ষার্থী উপস্থিত থাকে ৫ জন, শিক্ষক ঠিকমত পড়াই না, সুপার হুজুর, ঠিকমত মাদ্রাসায় উপস্থিত থাকে না। তিনি আরও বলেন এ মাদ্রাসার কোনো ভবিষ্যৎ নাই, একসময় অনেক ছাত্র ছিলো সুপারের নানা কর্মকান্ডের কারনে আমরা মাদ্রাসায় ছাত্র পাঠায় না।

 
এ বিষয়ে আরও এক অভিভাবক বলেন, সুপার মাদ্রাসার মধ্যে ধর্ম নিয়ে বাড়বাড়ি করে, এলাকার মধ্যে ওহাবী-সুন্নি দন্ধ লাগায়ছে, এ মাদ্রাসায় ছাত্র আমরা কেউ দেবো না। তাছাড়া নিয়োগের নামে সুপার লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করে মাদ্রাসাটাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। 

 
২০২৩ শিক্ষা বর্ষের প্রথমে অর্থাৎ জানুয়ারী মাসে মাদ্রাসায় ৩০০ এর বেশি শিক্ষার্থীর ভর্তি দেখিয়ে সরকারের কাছ থেকে বই সংগ্রহ করলেও, মাদ্রাসায় প্রথম শ্রেনি থেকে দশম শ্রেনি পর্যন্ত সে পরিমান ছাত্র ভর্তি হয় নি। কিন্তু অতিরিক্তি বইগুলো সরকারকে ফেরত দেওয়া হয়নি। তাহলে অতিরিক্ত বইয়ের কিছু অংশ অফিসে থাকলেও বেশ কিছু অংশ সুপার বিক্রি করে দিয়েছে এক অভিভাবক সদস্য অভিযোগ করেছে।


এছাড়াও বর্তমান পরিচালনা কমিটির একাধিক সদস্য মাদ্রাসার বর্তমান অবস্থার জন্য সুপারকে দায়ী করেছে। অভিভাবক সদস্য আমিনুল ইসলাম, কাজল মিয়া, বিদ্যুৎসাহী সদস্য কামরুল ইসলাম তারাসহ সাবেক একাধিক অভিভাবক সদস্য জানান, দুলালকান্দি দাখিল মাদ্রাসা একসময় আমাদের গ্রামের ঐতিহ্য ছিলো। কিন্তু বর্তমান সুপার প্রায় ২৫-২৬ বছর ধরে এ মাদ্রাসার সুপার হিসেবে কাজ করছে। মাদ্রাসার সার্বিক উন্নয়নে উনার ভূমিকা আছে কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতির জন্য তিনিই সবচেয়ে বেশি দায়ী। কেননা তিনি নিজেই মাদ্রাসায় নিয়মিত উপস্থিত থাকেন না, মাদ্রাসার সময়, পরীক্ষার সময় তিনি মাদ্রাসায় এসে হাজিরা দিয়ে চলে যান গরুকে গোসল দেওয়ার জন্য। সকল বিষয়ে তিনি একক সিদ্ধান্ত নেন। কমিটির কারো কথাকে গুরুত্ব দেন না। তাছাড়া কমিটিকে না জানিয়ে নিয়োগের নাম করে এলাকার একাধিক ব্যক্তির কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। নিয়োগ না দেওয়ায় টাকা ফেরত চাইলে নানা রকম তালবাহানা করেছে।  শেষ পর্যন্ত দরবার করে টাকা ফেরত নিতে হয়েছে। হানিফ নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে নিয়োগের জন্য ১ লাখ ৫০ হাজার টাকা নিয়েছে। তার ভাই টাকা ফেরত চাই তাকে দা দিয়ে কুপানোর জন্য দৌড়াইছে।  তারপরও কমিটি দরবার করে ১ লাখ ২০ হাজার ফেরত দিলেও আরও ৩০ হাজার টাকা বাকী রয়েছে। এসকল ঘটনার কারনে এলাকাবাসী অতিষ্ট।


সুপারের এরকম কর্মকান্ড সম্পর্কে অত্র মাদ্রাসার প্রতিষ্ঠাতার ছেলে বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতিকে বার বার অবগত করার পরও নেয়নি কোনো পদক্ষেপ। তিনি ঢাকায় অবস্থান করার কারনে মাদ্রাসার সকল বিষয়ে তিনি অবগত নন, তবে কমিটির একাধিক ব্যক্তি বলেন, সভাপতিকে সুপারের সকল বিষয় জানানোর পরও তিনি কোনো ব্যবস্থা নেয়নি। বরং কমিটি থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ প্রয়োগ করলে তিনি বলেন সুপারের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়ার জন্য।


মাদ্রাসার একাধিক শিক্ষকদের সাথে মাদ্রাসার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বললে তারা জানান, শিক্ষকদের সাথে সুপারের যথেষ্ট সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। তিনি শিক্ষকদের সাথে আলোচনা করে কোনো সিদ্ধান্ত নেন না। তাছাড়া কমিটি ও এলাকাবাসীর সাথে নানা বিষয়ে দন্ধের কারনে অভিভাবক তাদের সন্তানদের মাদ্রাসায় পাঠাতে চায় না। তাছাড়া বিগত কয়েকটা নিয়োগ সংক্রান্ত অর্থনৈতিক লেনদেনের কারনে কমিটির সাথে সুপারের দুরুত্ব বেড়ে যায়। তিনি কাউকে পরোয়া না করে নিজের ইচ্ছে মত নিয়োগ দিয়ে দিয়েছে। এতে কমিটির সাথে সুপারের অন্তর্দন্ধ শুরু হয়। এলাকার মধ্যে ওহাবী সুন্নী জামেলার কারনে অনেক অভিভাবক এ মাদ্রাসায় তাদের সন্তানদের ভর্তি করার পরও পড়াতে চাননা। তাছাড়া শিক্ষকদের সাথেও সুপারের সম্পর্ক তেমন ভালো যাচ্ছে না। সর্বোপরি মাদ্রাসার বর্তমান অবস্থার জন্য সুপারকেই দায়ী করছেন তারা।


এ সকল অভিযোগ অত্র মাদ্রাসার সুপার মাওলানা দেলোয়ার হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি বার্তা বিচিত্রাকে বলেন, প্রায় ২৬ বছর যাবৎ অত্র মাদ্রাসার সুপারের দায়িত্ব পালন করছি। এ পর্যন্ত কোনো সমস্যা হয় নাই। আজ কেনো এতো সমস্য সেটা আমি নিজেও জানি না। তবে আমার উপর যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ ভূল। প্রতিষ্ঠানের প্রতি আমার তেমন কোনো অবহেলা নেয়। নিজের হাতে গড়া প্রতিষ্ঠান। আজ কেনো শিক্ষার্থীর উপস্থিতি কম তা নিয়ে আমরা সবাই সংকিত। তাছাড়া সকল আলিয়া মাদ্রাসায় ছাত্র ছাত্রীর পরিমান দিন দিন কমছে। এছাড়া আমাদের এলাকায় ওহাবী-সুন্নি কোন্দলের কারনে অনেকে মনে করেন এটা ওহাবীদের মাদ্রাসা এ মনোভাব নিয়ে অনেকে মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী পাঠাতে চায় না। মাদ্রাসার কমিটির সাথে জামেলার কারন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, হানিফ নামে এক জনকে নিয়োগের জন্য হানিফ ও তার পরিবার মাদ্রাসার কেরানী কাজল মিয়া ও সহকারী শিক্ষক মনির হোসেনের মাধ্যে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা আমার কাছে জমা দেয়। তার নিয়োগ না হওয়ায় তার ভাইয়ের কাছে ১ লাখ ১৯ হাজার টাকা ফেরত দেওয়া হয়। কিন্তু বাকী ৩০ হাজারের কথা আমি জানি কার কাছে বা কোথায় আছে। তার পরবর্তী ২টা নিয়োগে আমার দ্বারা কোনো অর্থনৈতিক লেনদেন হয় নি। যারা বলছে তারা ভূল বলছে। নিয়মিত মাদ্রাসায় উপস্থিত থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার বাড়ি মাদ্রাসা থেকে বেশি দুরে না, আমি দুপুরের খাবারটাও মাদ্রাসায় নিয়ে আসি। তাহলে আমি মাদ্রাসাকে কিভাবে ফাকি দেবো? শিক্ষার্থীর ভর্তির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রথম শ্রেনি থেকে দশম শ্রেনি পর্যন্ত প্রায় ৩০০ ছাত্র ভর্তি আছে। তবে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির বিষয়ে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার পরিকল্পনা করছি।


অত্র মাদ্রাসার পরিচালনা কমিটির সভাপতি বলেন,  এ সকল অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছুই জানি না বা আমার কাছে কেউ লিখিত অভিযোগও করে নাই। আমি সুপারের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ পেলে সত্যতা যাচাই সাপেক্ষে সমাধানের চেষ্টা করবো। তবে ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান বড়। প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবো। 

Leave Your Comments