কাওছার আহমদ, কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) প্রতিনিধিঃ
মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নিয়াজুল তায়েফের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেছেন, উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ একেএম সফি আহমদ সলমান।
শনিবার (১ জুন) রাতে তিনি তার নিজ বাসায় এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, গত ৩১ মে রাতে উপজেলা ছাত্রলীগ সভাপতি নিয়াজুল তায়েফের ওপর যে হামলা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা সেটি মূলত মাদক ব্যবসার টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে। এই হামলার পেছনে আমার কোনো ধরনের ইন্ধন বা বিষয়টি আমার জানাও নেই। সে পরিকল্পিতভাবে আমার পরিবারের ২ সদস্যকে মামলায় আসামি করেছে।
তিনি বলেন, তায়েফ মাদকাসক্ত। সে মাদক ব্যবসার সাথেও জড়িত। মাদকের টাকা ভাগবাটোয়ারা নিয়ে ব্যবসায়ীক অংশীদাররা তার ওপর হামলা চালিয়েছে, যার যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে। তায়েফ একটি ফেসবুক পেজের লাইভে এসে এখন বলছে, আমার নির্দেশে নাকি তার ওপর হামলা চালানো হয়েছে। হামলার বিষয়ে আমি অবগত নই। মাদক তাকে এমনভাবে গিলে খেয়েছে যে, এখন সে পুরাই উন্মাদ হয়ে গেছে। সুস্থ মানসিক ও হিতাহিত জ্ঞান সে হারিয়ে ফেলেছে। তার একটা পুরো মাদকের সিন্ডিকেট রয়েছে। তার আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে আমি বলেছি, সে যেন আমার সঙ্গ ত্যাগ করে। টাকার জন্য সে বেপরোয়া হয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মানুষের কাছে চাঁদা চায়। প্রবাসীসহ অনেকে আমাকে টাকা চাওয়ার বিষয়টি জানায়। এমনকি ছাত্রলীগের কমিটির গঠনের সময় বিভিন্ন ইউনিয়নের কর্মীদের পদ দেয়ার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। কর্মীদের কাছ থেকে সে মাসিক টাকা আদায় করতো। টাকা চাওয়ার বিষয়টি ফেসবুকে বিভিন্ন ইউনিয়নের পদবঞ্চিত কর্মীরা ভাইরাল করেছেন।
ছাত্রলীগের সভাপতি হিসেবে যতদিন সে ভালো কাজ করেছে, ততদিন আমি তাকে টাকা পয়সা দিতাম। কিন্তু আমি যখন দেখলাম সে বেসামাল হয়ে গেছে, তখন আমি তাকে আর কোন সহযোগিতা করি না বা টাকা পয়সা দেই না। সে এতটাই বেসামাল যে, আমি নাকি সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভুমি দখলকারী বলতেও দ্বিধাবোধ করছে না। আমি কখনো চাঁদাবাজি করিনি। আমি কোন অপরাধের সাথে সম্পৃক্ত নই।
মানুষ তায়েফের কাছে হাজার হাজার টাকা পায়। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ রয়েছে। সে বিভিন্ন অপকর্মের সাথে জড়িত। এমন কোন কাজ নাই তার দ্বারা সংঘটিত হয়নি। আমি যখন দেখিছি, আমার নিজেকে ও সমাজকে নিরাপদ রাখার জন্য তাকে দূরে ঠেলে দেয়া প্রয়োজন, তাই আমি গত ৩০ এপ্রিল থেকে আমার কাছে না আসতে বলেছি। তার পরিবারের লোকজনকেও জানিয়েছি।
তিনি আরো অভিযোগ করে বলেন, বিয়ের পর থেকে তায়েফ মাদক গ্রহণ করে উন্মাদ হয়ে প্রায় সময় স্ত্রীকে শারীরিক নির্যাতন করতো। নির্যাতনের বিষয়টি তার পরিবার এবং স্থানীয় লোকজনের সবারই জানা। তার স্ত্রী, শ্বশুর, এমনকি পরিবারের লোকজন সবসময় জানাতেন। একপর্যায়ে তার স্ত্রী বাপের বাড়ি গিয়ে আটকা পড়ে। তায়েফের বাবাকে সাথে নিয়ে সালিশ বৈঠক করে তার স্ত্রীকে এনে দেই। কিছুদিন পর আবারও মাদক গ্রহণ করে যখন তায়েফ স্ত্রী লাবনীর ওপর শারীরিক নির্যাতন করতো তখন লাবনী আমাকে ওয়াটসআপে মেসেজ লিখে তার মাদকাসক্ত স্বামীর নির্যাতনের কবল থেকে তাকে উদ্ধার করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেবার অনুরোধ জানায়। বিষয়টি নিয়ে আমি একাধিকবার নিরসনের চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে সংশোধন হয়নি।
আমি তার বাবাসহ পরিবারের অন্য সদস্যদের বলেছি তায়েফ মাদকাসক্ত। তাকে সুস্থ করার জন্য চিকিৎসা প্রয়োজন। কিন্তু তার পরিবার তাকে সেই পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে পারেনি। তাই আমি বাধ্য হয়ে আমার পকেটের টাকা দিয়ে সিলেটে মাদক পুণর্বাসন কেন্দ্রে প্রায় ৩ মাস চিকিৎসা করাই। কিন্তু সেখান থেকে ফিরে এসে সে পুনরায় তার পুরনো অপকর্মে জড়িয়ে পড়ে।
কাদিপুর ইউনিয়নে টানা ৩ বার (১৯ বছর) সুনামের সাথে তিনি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিপুল ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি কুলাউড়ার উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন জানিয়ে সলমান বলেন, তার বড় ভাই মোসাদ্দিক আহমদ নোমানও ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তার ছোট ভাই জাফর আহমদ গিলমান সুনামের সহিত ওই ইউনিয়নে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।
তায়েফের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নিচ্ছেন জানিয়ে সলমান বলেন, বর্তমানে আমার পরিবারের মানসম্মান ও আমার ব্যক্তি ইমেজকে নষ্ট করার জন্য একটি কুচক্রি মহলের ইন্ধনে আমাকে জড়িয়ে মাদকাসক্ত তায়েফ এখন যে মিথ্যাচার করছে, এ জন্য আমি আইনগতভাবে ব্যবস্থা নেবো।