কুমিল্লায় অবুঝ দুই শিশুকে হত্যা দায়ে একজনের ফাঁসি আরেক জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড

Date: 2023-01-31
news-banner

বার্তা বিচিত্রা সর্বশেষ সংবাদ পেতে Google news অনুসরণের জন্য ক্লিক করুন


তাপস চন্দ্র সরকার, কুমিল্লা।।

পরকীয়া প্রেমের জের ধরে কুমিল্লা মুরাদনগরে অবুঝ দুই শিশুকে হত্যার দায়ে প্রধান আসামিকে মৃত্যুদণ্ড এবং সহযোগী আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন কুমিল্লার আদালত।

 ৩১ জানুয়ারি মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২টায় এ রায় দেন কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ ৩য় আদালতের বিজ্ঞ বিচারক রোজিনা খান।

মামলার বিবরণে জানা যায়- ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল সকাল ১১টার সময় বাদীর বাড়ির সন্নিকটে বাদীর ছেলে ইয়াছিন আরাফাত (৮) খেলাধুলা করার সময় আসামি ইয়াছমিন আক্তার সুকৌশলে অবুঝ শিশুদেরকে ফুসলাইয়া এবং চকলেট হাতে দিয়া ঘটনাস্থলে খালের পাড় ভুট্টা ক্ষেতে নিয়ে ইয়াছিন আরাফাতকে ধারালো ছুরি দিয়া জবাই করিয়া হত্যা করে এবং হত্যাকান্ড দেখে ফেলেছে মনে করিয়া বাদীর চাচা শাহ আলমের ছেলে জসিম (৭) কে খালের সন্নিকটে নিয়া গলায় চাপ দিয়া শ্বাসরোধ করিয়া হত্যা করে মৃতদেহটি খালের পানিতে ফেলিয়া দেয় এবং গুম করার হীন উদ্দেশে মৃতদেহটি কচুরি ফেনা ও মাটি দ্বারা ঢাকিয়া ফেলে। 

উক্তরূপ দৃশ্য বাদীর ভাই আল আমিনের ছেলে সিয়াম (৭) দেখিয়া ঘটনাস্থল হতে দৌড় দিয়ে পালাইয়া বাড়িতে আসে এবং খুনের বিষয়টি বাদীকে অবগত করিলে বাদী গ্রামের লোকজন নিয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে শিশু সিয়াম এর দেখানোমতে ভিকটিম ইয়াছিন আরাফাত (৮) এর গলাকাটা লাশ ভুট্টাক্ষেতের মধ্যে দেখতে পায় এবং জসিমের মৃতদেহ মৃতদেহ কচুরি ফেনা দ্বারা ঢাকানো অবস্থায় পানির মধ্যে দেখতে পেয়ে থানাপুলিশকে সংবাদ দিলে মুরাদনগর থানাপুলিশ ঘটনাস্থলে এসে মৃতের সুরতহাল রিপোর্টার তৈরী করেন এবং স্থানীয় লোকজন ও থানাপুলিশের সহযোগিতায় আসামি ইয়াছমিন আক্তারকে হাতে নাতে আটক করে।

 এ ব্যাপারে ২০১৪ সালের ২১ এপ্রিল নিহত ইয়াছিন আরাফাত এর পিতা কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার লাজৈর গ্রামের মোঃ আব্দুস সোবহানের ছেলে মোঃ বিল্লাল হোসেন বাদী হয়ে একই গ্রামের প্রবাসী বাবুল হোসেনের স্ত্রী মোসা: ইয়াছমিন আক্তার ও সেলিম মিয়ার স্ত্রী মাজেদা বেগমকে আসামি করে মুরাদনগর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করিলে আসামি ইয়াছমিন আক্তার স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়ে বলেন নিজেই খুন করিয়া জবাই কাজে ব্যবহৃত ছুরিটি খালে ফেলিয়া দিয়াছেন।

 তিনি আরও বলেন আমার চাচী শাশুড়ি মাজেদা বেগম জড়িত ছিল এবং দুজনে মিলিয়া অবুঝ দুইটি সন্তানকে খুন করিয়াছেন। এরপর তদন্তকারী কর্মকর্তা মোঃ হারুন অর রশিদ ঘটনা তদন্তপূর্বক ২০১৪ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর বিজ্ঞ আদালতে চার্জশীট দাখিল করেন (যাহার অভিযোগপত্র নং ২৩৭)।

 পরবর্তীতে মামলাটি বিচারে আসিলে আসামিদ্বয়ের বিরুদ্ধে দণ্ড বিধির ৩০২/২০১/৩৪ ধারার বিধানমতে চার্জ গঠনপূর্বক রাষ্ট্রপক্ষে মানীত ২২জন স্বাক্ষীর মধ্যে ১৬জন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শুনানী অন্তে আসামি ইয়াছমিন আক্তারকে মৃত্যুদণ্ড এবং মোসা: মাজেদা বেগমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন বিজ্ঞ আদালত। 

উল্লেখ্য যে, দু'টি হত্যাকান্ডের জন্য আসামি ইয়াছমিন আক্তারকে ডাবল মৃত্যুদণ্ড এবং আসামি মাজেদা বেগমকে ডাবল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।

দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন কুমিল্লা মুরাদনগর উপজেলার লাজৈর গ্রামের প্রবাসী বাবুল হোসেনের স্ত্রী মোসা: ইয়াছমিন আক্তার এবং ইয়াছমিন আক্তারের চাচী শ্বাশুড়ী একই গ্রামের সেলিম মিয়ার স্ত্রী মোসা: মাজেদা বেগম।

রাষ্ট্র পক্ষে মামলা পরিচালনা করেন অতিরিক্ত পিপি এডভোকেট মোঃ নুরুল ইসলাম এবং আসামিপক্ষে এড. আ.হ.ম তাইফুর আলম, এডভোকেট শাহনেওয়াজ সুলতানা (সুমা) ও এডভোকেট আতিকুর রহমান সুমন।

এ রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে রাষ্ট্রপক্ষের বিজ্ঞ কৌশলী মোঃ নূরুল ইসলাম বলেন আমি আশা করছি অতিশীঘ্রই এ রায় কার্যকর হবে।

অপরদিকে, আসামি পক্ষের বিজ্ঞ কৌশলী আতিকুর রহমান সুমন বলেন- বিজ্ঞ আদালত হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি এবং ঘটনার চাকুষ সাক্ষী সিয়ামকে সাক্ষী হিসেবে উপস্থাপন না করে শুধু স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দী ও ১৬জন সাক্ষীর সাক্ষ্যদান শেষে এ রায় ঘোষণা করায় আসামিপক্ষ ক্ষুদ্ধ। রায়ের কপি হাতে পেলে অচিরেই উচ্চ আদালতে আপীল করবো। আপীলে আমার আসামি খালাস পাবে ইনশাল্লাহ। 

Leave Your Comments