নওগাঁয় অটোমেটিক রাইচ মিল সমিতি ও ধান্য - চাউল আড়তদার সমিতির সংবাদ সম্মেলন

Date: 2022-10-11
news-banner

বার্তা বিচিত্রা সর্বশেষ সংবাদ পেতে Google news অনুসরণের জন্য ক্লিক করুন


মাহাবুব হাসান মারুফ, নওগাঁ প্রতিনিধি:

 সম্প্রতি ‘মিনিকেট’ চাল নিয়ে ওঠা বিতর্ককে চালকল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে গভীর যড়যন্ত্র বলে অভিযোগ করেছেন নওগাঁ জেলা অটোমেটিক রাইস মিল মালিক সমিতি ও ধান্য-চাউল আড়তদার সমিতির নেতারা। দেশীয় চালকল শিল্পকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে এবং চালকল মালিকদের হেয় করার জন্য বিভিন্ন মহল থেকে অবৈজ্ঞানিক ও বাস্তবতা বিবর্জিত কথা বলা হচ্ছে।  
আজ মঙ্গলবার দুপুরে নওগাঁ ধান্য-চাউল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির ভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে স্থানীয় চাল ব্যবসায়ীরা এ অভিযোগ করেন। নওগাঁ জেলা অটোমেটিক রাইস মিল মালিক সমিতি এবং ধান্য-চাউল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির যৌথ আয়োজনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।      
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন নওগাঁ ধান্য-চাউল আড়তদার ও ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি নিরোধ বরণ সাহা (চন্দন)। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, নওগাঁ জেলা অটোমেটিক রাইস মিল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক তৌফিকুল ইসলাম, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বেলকল গ্রুপের চেয়ারম্যান বেলাল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, সম্প্রতি সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি থেকে শুরু করে উচ্চ পর্যায়ের আমলারা বলছেন, মিনিকেট নামে কোনো ধান নেই। অথচ তাঁরা সরাসরি বলছেন না মিনিকেট নামে বাজারে প্রচলিত চাল কোন ধান থেকে উৎপাদিত। অথচ এই বিতর্ক উঠার আগে গত ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে বাজারে কম-বেশি মিনিকেট চাল আছে। তাঁরা উত্তরাঞ্চলের নাটোর, নন্দীগ্রাম, সিংড়া, রনবাঘা, চৌবাড়িয়া এবং কুষ্টিয়ার বিভিন্ন বাজারে কৃষকদের কাছ থেকে মিনিকেট ধান কিনছেন। তাহলে এটা কোন ধান? এই বিষয়টি স্পষ্ট করা হচ্ছে না। আবার বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে, মেশিনে চাল ছাঁটাই কিংবা সুপার পালিশ করে চাল ছোট কিংবা চাপ প্রয়োগ করে লম্বা করা হচ্ছে। বাস্তবতা হলো দেশের কোনো চালকলে চাল ছাঁটাই কিংবা লম্বা করার কোনো মেশিন নেই। প্রকৃতপক্ষে বাস্তবতা হলো, পর্যাপ্ত সেচ সুবিধার কারণে গোটা উত্তরাঞ্চলে ইদানিং ব্যাপক হারে জিরাশাইল ধানের চাষ হচ্ছে। এই জিরাশাইল ধানই দেশের কোনো কোনো অঞ্চলের কৃষকেরা মিনিকেট নামে বাজারে বিক্রি করছে। এ কারণে জিরাশাইল ধান থেকে উৎপাদিত চাল কোথাও মিনিকেট আবার কোথাও জিরাশাইল নামে বিক্রি হচ্ছে। 
লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, মিনিকেট চালের মতো প্রায় ৫০ বছর ধরে নাজির নামে এক ধরণের চাল বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেটের মতো নাজিরও একটি ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে নাজির নামে কোনো ধান নেই। চালকলে উৎপাদিত এক সিদ্ধ বিভিন্ন জাতের ধানের চালকে নাজির বলা হয়। যেমন, কাটারি ধানের এক সিদ্ধ চাল কাটারি নাজির, পায়জামের এক সিদ্ধ চাল পায়জাম নাজির, বিআর-২৮ ধানের এক সিদ্ধ চাল আটাশ নাজির বলা হয়। কিন্তু বাজারে গিয়ে ক্রেতারা কেউ বলে না যে, পায়জাম নাজির, আটাশ নাজির, কাটারি নাজির চাই। তাঁরা নাজির চাল চান। বাজারে প্রচলিত নাজির চাল উৎপত্তির জন্য তো চাল ব্যবসায়ী কিংবা চালকল মালিকেরা দায়ী নন। একইভাবে বলা চলে, বর্তমানে অধিকাংশ কৃষক সুগন্ধী ধান হিসেবে ব্রি-ধান-৩৪ চাষাবাদ করছেন। অথচ বাজারে সেই ধানের চাল চিনিগুড়া হিসেবে বিক্রি হচ্ছে। অথচ বিজ্ঞ-অভিজ্ঞ ব্যক্তিরা কিন্তু চিনিগুড়া চাল কোনো কথা বলছেন না। তাহলে কী নাজির ও মিনিকেট চাল প্রসঙ্গ নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে? 
নিরোধ বরণ সাহা বলেন, সম্প্রতি মিনিকেট ও নাজির চাল নিয়ে যে ধরণের বক্তব্য ও সংবাদ প্রকাশ হচ্ছে তাতে চাল ব্যবসায়ীদের হেয় করা হয়েছে। সম্প্রতি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ‘নওগাঁয় চাল কেটে তৈরি হচ্ছে মিনিকেট’ শিরোনামে একটি নিউজ করা হয়েছে। ওই সংবাদে প্রকাশিত তথ্য সম্পূর্ণ মিথ্যা, বিভ্রান্তিমূলক এবং বাস্তবতাবিবর্জিত। বাস্তবতা হলো চাল কেটে ছোট কিংবা লম্বা করার কোনো মেশনই এখনও আবিষ্কার হয়নি। তবে চাল ভেঙ্গে খুদ করা যেতে পারে। এ ধরনের সংবাদ প্রকাশের ফলে নওগাঁর চাল ব্যবসার ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বাজারে ভোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হচ্ছে। 
চালকল মালিক বেলাল হোসেন বলেন, ‘বলা হচ্ছে, বিভিন্ন জাতের ধানের চাউল কেটে নাকি মিনিকেট চাল তৈরি করা হয়। আমি সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানকে আমার মিলে স্বাগত জানাতে চাই, আমার মিলে যে মিনিকেট চাল উৎপন্ন হয় সেটি মেশিন দিয়ে কেটে ছোট কিংবা লম্বা করা হচ্ছে কিনা তা দেখার জন্য। এর আগেও দশবার এই পরীক্ষা দিয়েছি। আবার পরীক্ষা দিতে রাজি আছি।

Leave Your Comments