নানা অনিয়মে চলছে শিল্পমন্ত্রনালয়ের বিসিআইসির ১৩ জেলার সারের বাফার গোডাউন প্রকল্পের কাজ

Date: 2023-01-16
news-banner

বার্তা বিচিত্রা সর্বশেষ সংবাদ পেতে Google news অনুসরণের জন্য ক্লিক করুন



এস আই খানঃ


নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে চলছে শিল্পমন্ত্রনালয়ের বিসিআইসির ১৩ জেলায় সারের বাফার গোডাউন নির্মাণ প্রকল্পের কাজ। কৃষকের সার সংকট দুর করে বেশি ফলনের জন্য দেশের ১৩ জেলায় ৪৮২ কোটি টাকা বাজেটের এ প্রকল্পপটি লুটপাটের মহাকর্মযজ্ঞে পরিনত হয়েছে। অথছ শিল্পমন্ত্রী নরসিংদী-৪ (বেলাব- মনোহরদী) থেকে নির্বাচিত সাংসদ এড. নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন কিছুদিন আগেও শিল্পমন্ত্রনালয়কে অনিয়ম ও দুর্নীতিমুক্ত রাখার আহবান জানান। এ অনিয়ম ও লুটপাটে বিসিআইসির উক্ত প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) এ কে এম হাবিবুল্লাহ, সহকারী প্রধান হিসাবরক্ষক মোঃ আবুল কালাম, সহকারী প্রকৌশলী মোঃ ফরহাদ রায়হান ও অফিস সহকারী ও কাম কম্পিউটার অপারেটর আলমগীর হোসেন ও মুস্তাফিজুর রহমানসহ আরও অনেকে জড়িত।

বিশ^স্ত সুত্রের ভিত্তিতে প্রাথমিক তথ্য পাওয়ার পর বার্তা বিচিত্রা পত্রিকার অনুসন্ধান টিমের অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। টেন্ডার দেওয়া থেকে শুরু করে পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতে মরিয়া ছিলেন প্রকল্প পরিচালক নিজে। কাজ পাইয়ে দেবার পর অফিসে বসে চলে বাকী সব কাগজপত্র ও ভাউচার মিলানোর কাজ। এসব কাজের সহযোগী হিসেবে প্রকল্প পরিচালক সাথে সহযোগী হিসেবে রাখেন হিসাবরক্ষক, অফিস সহকারী ও কম্পিউটার অপারেটরকে। গাড়ীভাড়ার টেন্ডার মেসার্স জয় এন্টারপ্রাাইজকে দেওয়া হয়। কিন্তু মেসার্স জয় এন্টারপ্রাইজের কাছ থেকে ৫ লক্ষ টাকার বিনিময়ে টেন্ডার পাইয়ে দিয়েছে পকল্প পরিচালক এমন তথ্যও পাওয়া যায়। 

সরেজমিনে তদন্তে দেখা যায়  নির্ধারিত দোকান ছাড়া কোনো মালামাল কেনা হয়নি । আর এসব দোকান থেকে মালামালের কেনার সময় নেওয়া হয় অতিরিক্ত খালি ভাউচার। এসব খালি ভাউচার অফিসে বসে নিজেদের মত করে বিল লিখা হয়। বিসিআইসির মতিঝিল অফিসে পাওয়া যায় নাইমুল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আলীমুল এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স শেখ জেনারেল ষ্টোর, ভাইটাল ফুড এন্ড বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রিজ, গ্রামীণ সুইটমিট বেকারী এন্ড ফুড লিমিটেড, টেক ভ্যালী, গেটওয়ে টেক, বিটস লিমিটেড সহ আরও বেশ কিছু কোম্পানীর পেইড সীল  ও দোকান মালিকের স্বাক্ষর দেওয়া খালি ভাউচার। এ সকল ভাউচার নিজেদের মত করে দাম বসিয়ে প্রতিমাসে লূটে নেওয়া হচ্ছে কোটি কোটি টাকা।  

এছাড়াও মেসার্স জয় এন্টারপ্রাইজ,  ইউনাইটেড মাল্টি সিস্টেম রেœট-এ-কার, মেসার্স কুইক এন্টাপ্রাইজসহ বেশ কয়েকটি থেকে গাড়ি ভাড়ার নামে খালি ভাউচার দিয়ে লুটে হচ্ছে মোটা অংকের টাকা। গত জুলাই মাসের মেসার্স অহনা এন্টারপ্রাইজ থেকে দৈনিক ৪৭০০টাকা করে মাসের ৩০দিনে মোট ১ লাখ ৪১ হাজার টাকার একটি কার ভাড়া ও দৈনিক ৪১০০টাকা করে ২৪ দিন একটি মাইক্রো বাস ভাড়া বাবদ ৯৮৪০০টাকাসহ মোট ২ লক্ষ ৩৯হাজার ৪ শত টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে দেখানো হয়। তবে তথ্য মতে গত বছর জুলাই মাসে যাতায়তের বাস্তব কোনো তথ্য বিসিআইসি অফিসে নেই বলে জানা যায়। তার পরেও সরকারী কাজে মাসের ৩০দিন কর্মরত থাকার নজির শিল্পমন্ত্রনালয়ের বিসিআইসি ছাড়া পাওয়া সম্ভব নয়।

এছাড়াও প্রতি মাসে এফসি এবং ও.টি ভাতার নামে নেওয়া হয় লক্ষ লক্ষ টাকা। সরেজমিনে তদন্তে দেখা যায় গত ডিসেম্বর মাসে এফসি ও ও.টি বিল বাবদ তোলা হয় ৩১ হাজার ৭ শত ৯৫ টাকা। কিন্তু বিসিআইসির ১৩টি সারের বাফার গোডাউন নির্মাণ প্রকল্পের কোনো কর্মকর্তা কর্মচারী অতিরিক্ত সময় কর্মস্থলে ছিলেন না। তারা প্রতি মাসের ২০ তারিখের পর এফসি  ও ও.টি হাজিরা বহিতে স্বাক্ষর করেন বলেন গোপন সুত্রে জানা যায়। 

শিল্পমন্ত্রনালয়ের অধিনস্ত বিসিআইসির এ প্রকল্পের সকল অনিয়মের মাস্টারমাইন্ড সহকারী প্রধান হিসাব রক্ষক মোঃ আবুল কালাম। প্রকল্প পরিচালক (পিডি)কে এসকল অনিয়মের সকল পরিকল্পনা প্রদান করেন মোঃ আবুল কালাম। আর এসকল পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করার জন্য অফিস সহকারী সিবিএর নেতা আলমগীর হোসেন ও কম্পিউটার অপারেটর মুস্তাফিজকে ব্যবহার করেন। অধিকাংশ খালি ভাউচার মুস্তাফিজ, সিবিএর নেতা আলমগীর ও হিসাব রক্ষক মোঃ আবুল কালামের হাতে লেখা। সিবিএর নেতা হওয়ায় অফিস সহকারী আলমগীর সবার ধরা ছোয়ার বাইরে। 

শিল্পমন্ত্রনালয়ের অধিনস্ত বিসিআইসির ১৩ জেলায় সারের বাফার গোডাউন নিমার্ণ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুলাই মাস থেকে শুরু হয়। যা ২০২২ সালের ডিসেম্বরে শেষ করে হস্তান্তর করার কথা। কিন্তু ১৩ টি জেলার মধ্যে এখনো গোপালগঞ্জ জেলার প্রকল্পের কাজ শুরু হয়নি।
প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে বাফার গোডাউন প্রকল্পের কাজ কেনো ৩ বছরেও শুরু হয়নি সেটা একটি বড় প্রশ্ন?

Leave Your Comments