আব্দুল্লাহ আল মামুন (ঢাকা ব্যুরো প্রধান): ঢাকার দক্ষিণ কেরাণীগঞ্জের চাঞ্চল্যকর ও বহুল আলোচিত ব্যবসায়ী ওয়াসিম হত্যা মামলার মূল পরিকল্পনাকারী মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামী জাহাঙ্গীর আলম ওরফে আলম দীর্ঘ ৮ বছর পলাতক থাকার পর অবশেষে র্যাবের হাতে আটক হয়েছে। এক গোপন তথ্যের ভিত্তিতে রাজধানীর রামপুরা থানাধীন বনশ্রী এলাকা থেকে গত ১১ মে বৃহস্পতিবার ভোর আনুমানিক ৫ টায় র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১০ তাকে গ্রেফতার করে। জাহাঙ্গীর আলম কেরানীগঞ্জ মডেল থানাধীন জিনজিরা নামাবাড়ী এলাকার মৃত: আহাদ বক্সের ছেলে বলে র্যাব সূত্রে জানা যায়।
র্যাব-১০ এর অধিনায়ক (পরিচালক) এ্যাডিশনাল ডিআইজি মোহাম্মদ ফরিদ উদ্দিনের বরাত দিয়ে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ‘বার্তা বিচিত্রা’কে জানানো হয় যে, ২০১৫ সালের ৪ এপ্রিল ঢাকা জেলার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন আগানগর এলাকায় জনৈক শরিফ মিয়ার ২য় তলা টিনসেট বাড়ির একটি কক্ষ হতে অজ্ঞাতনামা এক ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে কেরানীগঞ্জ থানা পুলিশ। এ ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামী করে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় একটি হত্যা মামলাও রুজু করে। পুলিশের তদন্তে নিহত ব্যক্তির নাম ওয়াসিম বলে জানা যায়। পরবর্তীতে পুলিশ অধিকতর তদন্তে উক্ত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করে এবং হত্যাকান্ডে জড়িত মো. জাহাঙ্গীর আলম ওরফে আলম (৪৫), মো. আঃ বাতেন (৩৮), মো. পলক রহমান সাগর ওরফে ডেঞ্জার সাগর (১৯), পাপ্পু (২০) ও কিশোর অপরাধী ১৬/১৭ বছরের মো. সজিবসহ ৫ জনকে চিহ্নিত করে এবং তাদের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ৭ নভেম্বর বিজ্ঞ আদালতে অভিযোগপত্র দায়ের করা হয়।
পুলিশের দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে ১৭ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহন এবং আসামী মো. পলক রহমান সাগর ওরফে ডেঞ্জার সাগর ও কিশোর অপরাধী মো. সজিব এর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে বিজ্ঞ আদালতে উল্লেখিত আসামীদের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ প্রমানিত হয়। অতঃপর ২০২২ সালের ১০ ফেব্রুয়ারী বিজ্ঞ আদালত মো. জাহাঙ্গীর আলম, আঃ বাতেন, পলক রহমান ও পাপ্পু’দেরকে উক্ত ওয়াসিম হত্যা মামলায় মৃত্যুদন্ডাদেশ দেন। আসামী মো. জাহাঙ্গীর আলম ও পাপ্পু দীর্ঘদিন পলাতক থাকায় বিজ্ঞ আদালত তাদের বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানা ইস্যু করেন।
আটক জাহাঙ্গীর আলমকে র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম ওয়াসিম ও আসামীরা পরস্পর বন্ধু ছিল। তারা সবাই একই সঙ্গে চলাফেরা করত। উক্ত হত্যার পূর্বে ওয়াসিম জাহাঙ্গীর’কে তাদের ক্লাব থেকে বের করে দিয়েছিল। এতে জাহাঙ্গীর আলম ও ওয়াসিম এর মধ্যে মনোমালিন্য এবং বিরোধের সৃষ্টি হয়। উক্ত বিরোধের জের ধরে জাহাঙ্গীর আলম ওয়াসিমকে হত্যার পরিকল্পনা করে। অতঃপর সে ওয়াসিমকে হত্যা করার জন্য বাতেনের সঙ্গে পরিকল্পনা করে ও ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে ভাড়াটে খুনি নিয়োগ করে। জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা অনুযায়ী বাতেন, সজিব, পাপ্পু ও পলক রহমান সাগর ওরফে ডেঞ্জার সাগর মিলে ওয়াসিমকে হত্যার তারিখ ও স্থান নির্ধারণ করে। অতঃপর ২০১৫ সালের ৩ এপ্রিল দুপুর বেলা গ্রেফতারকৃত আসামী জাহাঙ্গীর আলমের পরিকল্পনা অনুযায়ী ওয়াসিমকে হত্যার জন্য সজিব ও পলক রহমান সাগর ওরফে ডেঞ্জার সাগর তাদের নির্ধারিত স্থান দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানাধীন আগানগর বাঁশপট্টী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২, ঢাকা স্টেশনের পিছনে জনৈক শরিফ মিয়ার ২য় তলা টিনসেট বাড়ির একটি কক্ষে অবস্থান করে।
অন্যদিকে আসামী বাতেন ও পাপ্পু বাবু বাজার ব্রিজ হতে ওয়াসিমকে উক্ত স্থানে ডেকে এনে রুমের মধ্যে আটক করে রাখে। পরদিন ৪ এপ্রিল রাত আনুমানিক দেড়টার দিকে আসামী জাহাঙ্গীর আলমের নির্দেশে বাতেন, পলক, সজিব ও পাপ্পু হত্যার উদ্দেশ্যে ওয়াসিমের হাত-পা ও মুখ বেঁধে ফেলে এবং গরু জবাই করার বড় ছোরা দিয়ে ওয়াসিমকে জবাই করে নৃশংসভাবে হত্যা করে ঘটনাস্থল হতে পালিয়ে যায়।