ঠাকুরগাঁওয়ে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে আমনের আবাদ ফলন ও দামে খুশি কৃষকরা

Date: 2022-11-12
news-banner

বার্তা বিচিত্রা সর্বশেষ সংবাদ পেতে Google news অনুসরণের জন্য ক্লিক করুন



মাহমুদ আহসান হাবিব,ঠাকুরগাঁও ॥ দেশের উত্তরের কৃষিতে স্বনির্ভর জেলা ঠাকুরগাঁও। আমনের গন্ধ বলে দেয় এখানে শুরু হয়েছে নবান্নের আমেজ। ইতিমধ্যেই এ জেলায় শুরু হয়েছে আমন ধান কাটা ও সংগ্রহের কাজ। আর এবার ধানের ফলনে ও দামে খুশি কৃষকরা।  

চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, দিগন্ত জোড়া ফসলি মাঠ গুলো খোলা আকাশের নীচে সূর্য্যের ঝলমলে রোদে আমনের সোনালি শীষ দোল খাচ্ছে হেমন্তের মিষ্টি বাতাসে । আর মাঠের সেসব সোনালি রঙের পাকা ধানের শীষ কাটছেন কৃষকরা। কেউ আঁটি বেঁধে ধানের বোঝা কাধে, কেউ ভ্যানে আবার কেউ গাড়িতে করে নিয়ে যাচ্ছেন নিজ বাড়ি। বাড়ি নিয়ে গিয়ে এসব মাড়াই ও পরিষ্কার করে ধান সেদ্ধ করে শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষক-কৃষাণীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মতে, জেলায় এই মৌসুমে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমি ও উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৪ লক্ষ ২৯ হাজার ৭১৬ মেট্রিক টন। কিন্তু লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে আরও ১০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে আমনের। অর্থাৎ এবার জেলায় মোট ১ লক্ষ ৩৭ হাজার ৪৬০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে আমনের। এ পর্যন্ত মাত্র ১১ শতাংশ অর্থাৎ ১৪ হাজার ৫৮২ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। এতে ফলন হয়েছে ৫ হাজার ৭৩০ মেট্রিক টন। আর হেক্টর প্রতি গড় চাল উৎপাদন হয়েছে ৩ দশমিক ৪৮ মেট্রিক টন। যেখানে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ৩ দশমিক ১৩ মেট্রিক টন চাল। লক্ষ্যমাত্রার থেকে আবাদ ও ফলন দুটিই বেশি।
কৃষকরা বলছেন, এবার সার ও কীটনাশকের দাম বেশি হলেও ধানের ফলন বেশি হওয়ায় ও দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তারা। তবে অন্যান্য জিনিসপত্রে দাম কমালে তাদের জন্য ভালো হতো।

সদর উপজেলার নারগুন এলাকার কৃষক বজলুর রহমান ১০ বিঘা (৫০ শতকে) জমিতে চাষ করেছেন আমন ধান। তিনি বলেন, ‘এবার সার ও কীটনাশকের দাম অনেক বেশি হলেও অন্যান্য বারের থেকে এবার ধানে কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছে ২-৩বার। আর অন্যান্য বার পোকা-মাকড় বেশি হওয়ায় কীটনাশক স্প্রে করতে হয়েছিল প্রায় ৫-৬ বার। এবার ধানে পোকা-মাকড় কম হওয়ায় স্প্রে কম করতে হয়েছে ও ধানের ফলনও হয়েছে ভালো। আমার এক বিঘা জমিতে এবার প্রায় ৩৫-৩৬ মণ ধান হয়েছে আর খরচ হয়েছে সর্বোচ্চ ১০-১২ হাজার টাকা। আর এক বিঘার জমির ধান বিক্রি করেছি ৩৬ হাজার টাকা। এতে এবার ধানের ফলন ও দাম বেশি হওয়ায় আমরা কৃষকরা বেশ লাভবান।,

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া এলাকার কৃষক মহিবুল ইসলাম বলেন, ‘আমি ৩৩ শতকে বিঘার ১০ বিঘা জমিতে আমন ধান করেছি। এতে আমার বিঘা প্রতি খরচ হয়েছে প্রায় ৮-১০ হাজারের মতো। এর মধ্যে প্রায় ৭ বিঘা জমির ধান কেটে বিক্রয় করেছি। এক বিঘায় ফলন হয়েছে ২০ মণ করে। আর বিঘা প্রতি ২৪ হাজার টাকার ধান বিক্রি করেছি মানে ২৪০০ টাকা করে ধানের বস্তা বিক্রি করেছি। তবে ধানের দাম পেয়ে খুশি হলেও সরকার যদি অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম কমাতো তাহলে আমরা কৃষকরা আরো বেশি খুশি হতাম।,
নাজমুল হক নামে এক কৃষক বলেন, এবার আমন মৌসুমে রাসায়নিক সার সময় মতো টাকা দিয়েও পাইনি ও কীটনাশকের দামও অতিরিক্ত হারে বেড়ে গেছে তারপরেও আল্লাহর রহমতে এবার ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে দামও মোটামুটি আছে। তাতে এবার ধানের ভালোই পত্তা হবে সবার ইনশাল্লাহ।
পীরগঞ্জ উপজেলার কৃষক তফাজ্জল হোসেন বলেন, আমন রোপনের সময় আকাশের বৃষ্টি না হওয়ায় শ্যালো মেশিন দিয়ে ধান লাগিয়েছিলাম। আর তখন আবার ডিজেলের দাম হঠাৎ করে বৃদ্ধি পায়। এতে মনে করেছিলাম যে এবার আর ধান তেমন ভালো হবে না। প্রথম দিকে শ্যালো মেশিন দিয়ে সেচ দিতে হলেও শেষের দিকে এইদিকে আকাশের বৃষ্টি হওয়ায় আল্লাহর রহমতে ধানের ফলন অনেক ভালো হয়েছে।

স্থানীয় বাজারে বর্তমানে আগাম জাতের হাইব্রীড ধানিগোল্ড ধানের ৭৫ কেজির বস্তা ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে ২২০০ থেকে ২৩৫০ ও সুমন স্বর্ণ জাতের ধানের বস্তা ২৪০০ থেকে ২৪৫০ টাকা করে কেনা-বেচা হচ্ছে। তবে এর থেকে দাম আরও বাড়ার সম্ভবনা আছে বলে জানান, সদর উপজেলার ধান-চালের ব্যবসায়ী মো. আবুল কাশেম।

বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার ধান চালের ব্যবসায়ী মো. রমজান আলী বলেন, গতবারে ৮০ কেজির এক বস্তা ধানের দাম ছিল ২,০০০ টাকা এবার বস্তা প্রতি ধানের দাম ২০০ থেকে ৪০০ টাকা বেশি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. আব্দুল আজিজ জানান, জেলায় লক্ষমাত্রার থেকে আমান আবাদ বেশি ও উৎপাদন ভালো হওয়ায় এবার লক্ষমাত্রার থেকেও উৎপাদনও বেশি অর্জিত হবে এবং বর্তমানে ধানের যে মূল্য এমন বাজার মূল্য থাকলে কৃষকরা লাভবান হবেন ।

Leave Your Comments